শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Riya Patra | ০৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৬ : ৫৭Riya Patra
রিয়া পাত্র, ভাঙড়
পঞ্চায়েত ভোট। জুন-জুলাইয়ের উত্তপ্ত পরিস্থিতি, মুহূর্মুহূ বোমা-গুলি, দলীয় কর্মীদের মৃত্যু, জখম পুলিশ, উত্তাল রাজনীতি আলোড়ন তুলেছিল দেশ জুড়ে। ঠিক যে যে জায়গায় রক্ত ঝরেছিল, ভাঙড় ২ বিডিও অফিস এলাকা, ভোটের গণনা কেন্দ্র কাঁঠালিয়া স্কুল বাড়ির আশপাশ, সোনপুর ঘুরে আসুন। দেখবেন কী নিশ্চিন্তির জীবন। পানাপুকুরের পাশে গরু ছেড়ে গাছতলায় বসে আছেন মধ্য তিরিশের যুবক, বাজারে সিমাই ওজন করছেন বিক্রেতা,ইদের জামা কিনে ঘরে ফিরছেন নানা। তবে টোটো থেকে নামতে নামতে একজন বলে গেলেন, "দিদি এইতো জীবন, আলোর কোলে অন্ধকার।" বুঝতে একটু সময় লাগল। আসলে যে প্রশ্নের খোঁজে এতদূর আসা আদতে সেই আশঙ্কাই সত্যি! বাইরে হাসি খুশি, ইদের পসরা কেনা-বেচার মাঝেই চাপা আতঙ্ক।
মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে যেখানে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল, সেখানে বসেই ঘোলাটে চোখে নরুল মিয়া বললেন, "রমজান মাস বলে প্রার্থীরা এখনও সেভাবে আসছেন না প্রচারে। তবে ভয় কেন পাব? ভয় কিসের? কোনও ভয় নেই।" প্রশ্ন করা হল, জানেন অশান্তি কেন হয়েছিল? ততোধিক নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললেন, "কী করে বলি বলুন। জানি শুধু দুই দলে ঝামেলা হল। মানুষ মরল।" এবারে কি একই ঘটনা ঘটবে? নরুল মিয়ার উত্তর কেড়ে আব্বাস বলেন, "দেখুন, আতঙ্ক তো আছেই। প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ বুথে আতঙ্ক আছে।" কিন্তু এর কারণ কী? সাফ জবাব, "রাজনীতি আগে ছিল একরকম। এখন লোকজন করে খাওয়ার জন্য পার্টি করে। এলাকা দখলের লড়াই করে।" মৃত্যু-আতঙ্ক মনে করতে চান না তাঁরা আর।
এই গরমে মাদুর কিনে ঘরে ফিরছিলেন ষাটোর্দ্ধ একজন। প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললেন, "রোজা শেষ হলে কী হবে কে জানে।" বাজারের মাঝে দোকান সরিফুলের। তাঁর আবার সহজ উত্তর। অকপটে এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন, "আতঙ্ক কীসের? ভোট এলে তো ঝামেলা হবেই। কেউ কাউকে জায়গা না ছাড়লে মারামারি হবে না?" যেন এটাই দস্তুর। কিন্তু কবে থেকে এমন হয়ে গেল পরিস্থিতি? সাধারণ মানুষ বলছেন, ২০০৭-০৮-এর আগে থেকে অতটা অশান্ত ছিল না পরিস্থিতি। কেন এমন হল? তার উত্তর তাঁরা জানেন না কেউ। সাইফুল মোল্লা সামান্য হেসে বললেন, "ওসব আমরা কিছু মনে করি না। ওসব স্বাভাবিক। এখন ইদ বলে থেমে আছে। ঈদ মিটলেই আবার বোম পড়া শুরু হবে। দোকান বন্ধ করে ছুটতে হবে। ওসব অভ্যেস। নতুন ব্যাপার না। যে সুযোগ পায় সে মারে।" ঝামেলা প্রসঙ্গে অনেকের অভিযোগের তীর আবার পুলিশের দিকেই। পুলিশের দোষ না কি নেতাদের? সেকথা ভাবতে চান না রোশনারা বিবি। শুধু প্রার্থনা করছেন, যেন আবার বিভীষিকার দিন না ফেরে। কী হয়েছিল তখন, ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয় তাঁর। বললেন, "মনোনয়ন থেকে গণনা পর্যন্ত। শুধু মৃত্যুর খবর। কারণ জানিনা সঠিক। শুধু জানি, আমাদের ঘরের পুরুষদের এক সপ্তাহ গ্রামছাড়া থাকতে হয়েছিল। আতঙ্কে কাঁটা হয়ে থাকতাম। টুকিটাকি ঝামেলা গাঁয়ে গঞ্জে হয়, তা বলে এমন ভয়ানক?" উদাস তাকিয়ে বলেন, "মানুষের মনে ভয় তো থাকবেই। অতো বড় একটা ঘটনা। মুখে যাই বলি, আতঙ্ক থাকবে তো।" অনেকেই আবার বলছেন পঞ্চায়েত ভোট আর লোকসভা ভোট যেহেতু আলাদা, তাই হয়ত এবার অতোটা ঝামেলা হবে না। অনেকেই ভরসা রাখছেন কলকাতা পুলিশের ওপর। ভাবছেন এ বার পরিস্থিতি কিছুটা হলেও ভাল হতে পারে। তবে এখন তাঁরা ওই "আলোর কোলে অন্ধকার" পরিস্থিতিতে দুদিন পরের চাঁদ দেখার অপেক্ষা করছেন।